নতুন ধরণের নিউট্রিনো এর সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা (পর্ব-২)

গত পর্বে আমরা নিউট্রিনো অসিলেশন সম্পর্কে জেনেছিলাম। নিউট্রিনো অসিলেশন এর ঘটনা প্রতিষ্ঠিত হবার পর, বিজ্ঞানীরা পারটিক্যাল এক্সিলারেশন ব্যাবহার করে একে গবেষণা করতে পারেন। তারা নিউট্রিনো বিম তৈরি করতে পারেন এবং কত তারাতারি তারা এক ফ্লেভার থেকে অন্য ফ্লেভারে রুপান্তরিত হতে পারে তা চিহ্নিত করতে পারেন। মূলত একটি নিউট্রিনো ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে যেখানে সারা বিশ্বের গবেষকরা পড়ালেখা করছেন এই ব্যাপারে।

একটি চতুর্থ ফ্লেভার এর সন্ধান!

2001 সালে লস অ্যালামোস গবেষণাগারে এলএসএনডি (তরল সিলিনেটর নিউট্রিনো ডিটেক্টর) এর সহযোগিতায় দেখা গেছে, তাদের পরিমাপ তিনটি নিউট্রিনো ফ্লেভার স্বীকৃত ছবিতে মাপসই হয়নি। ফলাফলকে গ্রহণযোগ্য করতে তাদের চতুর্থ ধরণের নিউট্রিনো অনুমান করে নিতে হচ্ছে। এই নিউট্রিনো কোন সাধারণ নিউট্রিনো নয়। একে “স্টেরাল নিউট্রিনো” বলা হয়। যার অর্থ, সাধারণ নিউট্রিনোগুলির বিপরীতে, এটি দুর্বল শক্তি অনুভব করে নি। কিন্তু এটি নিউট্রিনো অসিলেশনে অংশগ্রহণ করে। যার ফলে নিউট্রিনো ফ্লেভারের পরিবর্তন হয়। তাই এটি ডার্ক ম্যাটার এর একটি আদর্শ প্রার্থী ছিল।

তাই হয়তো এটি একটি শীতল পর্যবেক্ষণ হতে পারে, কিন্তু অন্যান্য অনেক নিউট্রিনো পরীক্ষা তাদের সাথে একমত হয়নি। আসলে, এলএসএনডি ফলাফলটি একটি বাহ্যিক সনাক্তকরণ ছিল – তাই অদ্ভুত যে এটি সাধারণত নিউট্রিনো পদার্থবিজ্ঞানের মেটা বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় না।

এখন আমরা যাব সাম্প্রতিক পরিমাপে, যা সংগঠিত হয়েছে ফারমিল্যাব এ “মিনিবোন” এর মাধ্যমে। নামটি এসেছে “বুস্টার নিউট্রিনো পরীক্ষা” থেকে। নিউট্রিনো তৈরি করতে এটি একটি ফারমিল্যাব এক্সিলারেটর ব্যাবহার করেছে, যার নাম বুস্টার। মিনি শব্দটি এসেছে যখন এটি তৈরি হয়েছে, এত বড় পরীক্ষাটি পরিচালনা করা তখন ছিল স্বপ্নের মতো।

মিনিবোন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, তাদের তথ্যটি আসলে এলএসএনডি পরিমাপকে সমর্থন করে এবং যদি তারা এলএসএনডি তথ্যের সাথে তাদের তথ্য মিলিত করে, তবে পরিমাপের পরিসংখ্যানগত শক্তিটিকে তারা একটি আবিষ্কার হিসেবে দাবি করতেই পারে, যে আবিষ্কারটির নাম হল “স্টেরাল নিউট্রিনো”।

কিন্তু তারপর অনেক পরীক্ষাই এলসএনডি (এবং এখন মিনিবোন) পরীক্ষার সাথে ভিন্নতা দেখায়। তাহলে ব্যাপারটা কি ছিল?

তারা বলেন এটি একটি ভাল প্রশ্ন। এমনটি হতে পারে যে, মিনিবোন গবেষকরা এমন কিছু খুজে পেয়েছেন, যা অন্যান্য পরিক্ষাগুলো ধরতে পারছে না অথবা এলএসএনডি এবং মিনিবোন উভয়ের আবিষ্কারই মিথ্যা ছিল অথবা হতে পারে এই দুটি পরীক্ষার যন্ত্রগুলো বিশেষ সংবেদনশীলতা ছিল, যা অন্যগুলোতে ছিল না। একটি বিশেষ পরিমিতি হল, নিউট্রিনোগুলো যেখানে উৎপাদিত হয়েছিলো এবং যেখানে তাদের সনাক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে দূরত্ব তুলনামুলকভাবে কম ছিল। মাত্র কয়েকশত মিটার, যন্ত্রপাতির দৈর্ঘ্য ছিল কয়েকটি ফুটবল মাঠের সমান। নিউট্রিনোগুলো অসিলেট করতে সময় নেয় এবং, যদি তারা চলমান হয়, দূরত্ব অতিক্রম করতে করতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। অনেক নিউট্রিনো অসিলেসেশনের পরীক্ষায় কয়েক বা কয়েক শত মাইল দূরে অবস্থিত ডিটেক্টর রয়েছে। হয়তো, গুরুত্বপূর্ণ অসিলেশনটি তারাতারি ঘটে, তাই কম দূরত্বের ডিটেক্টর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও এলসএনডি এবং মিনিবোন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভক্ত, কিন্তু তারা একইরকম ফলাফল দিচ্ছে, হতে পারে তারা উভয়েই একই সত্য তুলে ধরছে অথবা তারা একই রকমের ভুল করছে, এটা নিশ্চিত করা কঠিন।

তাহলে আমরা এর সমাধান কিভাবে করবো? কিভাবে সঠিক সত্যটি জানতে পারবো? যাই হোক, এটিই বিজ্ঞান, এবং বিজ্ঞানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যুক্তিরই জয় হয়।

ভাল খবর এই যে, ফারমিল্যাব এর দক্ষতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে। নিউট্রিনো নিয়ে গবেষণা করার জন্য আরও তিনটি যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো হল, মাইক্রোবোন(মিনিবোনের ছোট সংস্করণ এবং আলাদা প্রযুক্তি), আইসিআরএসএস (ইমেজিং কসমিক এবং রেয়ার আন্ডারগ্রাউন্ড সিগন্যাল) এবং তৃতীয়টি এসবিএন (শর্ট বেসলাইন নিউট্রিনো)। এই যন্ত্রগুলো এলসএনডি এবং মিনিবোন থেকে অনেক বেশি কার্যকর। তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন হয়তো কয়েক বছর পরে তারা “স্টেরাল নিউট্রিনো” সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারবেন।

তাই আপাতত সঠিক উত্তরটি আসলে কি হবে তা আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। উত্তর যেমনই হোক নিউট্রিনো বরাবরই রহস্য তৈরি করে চলেছে, যা কোন গোয়েন্দা কাহিনী থেকে কোন অংশেই কম নয়!

 

মন্তব্য নেই

আপনার মন্তব্য লিখুন

বিভাগ সমূহ
সম্প্রতি প্রকাশিত
পাঠকের মতামত
আর্কাইভ