ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর রহস্যময় জগত!

আলো আসলে কি ?

এ নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই নানা বিজ্ঞানী নানা ধরনের মতবাদ উপস্থনাপন করে আসছেন। বর্তমানে, আলো বলতে আমরা বুঝি, আলো হলো এক ধরনের শক্তি যার সাহায্যে আমরা দেখতে পারি বা যা আমাদের দর্শনের আনুভুতি জাগায়। কিন্তু এটি নিজে অদৃশ্য। আমরা জানি আলো তরঙ্গ নাকি কণা এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ আছে । আজকে আমরা টু স্লিট বা ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট বা আলোর দ্বি চির পরীক্ষার সাহায্যে আলো তরঙ্গ নাকি কণা তা নির্ণয় করার চেষ্টা করবো। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট আলোর তরঙ্গ এবং কণা ধর্মের দ্বৈততার একটি প্রমান ।

সর্বপ্রথম ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট করেন ১৮০১ সালে বিজ্ঞানী থমাস ইয়ং। তিনি আলো নিয়ে একটি পরিক্ষা করেন। যাকে ইয়ং এর টু স্লিট এক্সপেরিমেন্ট বলা হয়, তাঁর এই পরীক্ষা আলোর তরঙ্গ ধর্মের সত্যতা প্রমান করে।

সহজভাবে বোঝার জন্য আগে আমরা একটি উদাহরন বিবেচনা করতে পারি। আমরা যদি একটি ছিদ্র বিশিষ্ট চির নিই এবং এর মধ্য দিয়ে অনবরত মার্বেল নিক্ষেপ করি তাহলে দেখা যাবে কিছু মার্বেল চিরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসছে এবং কিছু মার্বেল চিরের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে অপর পাশে একটি দাগ বা লাইন তৈরি করবে। এখন, আমরা যদি একটি দুই ছিদ্র বিশিষ্ট স্লিট বা চির নিই এবং এর মধ্য দিয়ে যদি আমরা অনবরত মার্বেল নিক্ষেপ করি তাহলে কি ঘটবে? কিছু মার্বেল চিরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বিপরীত দিকে ফিরে আসবে এবং কিছু মার্বেল চিরের দুই ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করবে এবং চিরের অপরপাশে দুটি দাগ বা লাইনের সৃষ্টি করবে।

ঠিক একই কাজ যদি আমরা ওয়েভ বা তরঙ্গের ক্ষেত্রে করি তবে কি হবে? একটি ছিদ্র বিশিষ্ট স্লিট এর ভেতর দিয়ে ওয়েভ গিয়ে একটি তিব্র প্রাবল্যতার লাইন বা রেখা উৎপন্ন করে। এবার যদি আমরা দুই ছিদ্র বিশিষ্ট চির বা ডাবল স্লিট এর ভেতর দিয়ে ওয়েভ দিই তাহলে কি হবে? তখন দুই ওয়েভ মিলে ইন্টারফেরেন্স বা ব্যতিচার সৃষ্টি করবে যার ফলে পিছনের দেয়ালে একটি ইন্টারফেরেন্স প্যাটার্ন দেখা যাবে। যেখানে, দুটো ওয়েভ মিলিত হয়ে একটি তিব্র প্রাবল্যতার লাইন তৈরি করবে এবং যেখানে তারা মিলিত হবে না সেখানে অন্ধকার থাকবে অর্থাৎ কোন লাইন দেখা যাবে না। এভাবে একের পর এক একটি উজ্জ্বল আলোর লাইন এবং একটি অন্ধকার লাইন দেখা যাবে এবং মাঝখানের লাইনটি সবথেকে বেশি উজ্জ্বল হবে।

আমরা যদি এবার আলো নিয়ে এই পরীক্ষাটি করি তাহলে আমরা কি পাবো? এখানে মনে রাখতে হবে আমরা অবশ্যই মনোক্রমাটিক বা একবর্ণী আলো নেবো। সেক্ষেত্রে দেখা যাবে আলোর ক্ষুদ্র কণিকা দুই চিরের ভেতর দিয়ে গিয়ে একটি ইন্টারফেরেন্স প্যাটার্ন তৈরি করছে এবং ওয়েভ এর ধর্মের মতোই পেছনের দেয়ালে একের পর এক উজ্জ্বল আলোর লাইন এবং অন্ধকার লাইন তৈরি করছে ! এর থেকে আমরা আলোর তরঙ্গ ধর্মের একটি প্রমান পাই।

 


এবার কোয়ান্টাম মেকানিক্সে যাওয়া যাক। ঠিক একই কাজ যদি আমরা ইলেকট্রন গানের সাহায্যে ক্ষুদ্র ইলেকট্রন নিয়ে করি তখন কি ঘটবে ? আমরা জানি ইলেকট্রন পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকাগুলোর একটি। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনের মার্বেলের মতো আচরণ করার কথা। কারন দুটোই কণিকা। কিন্তু কোয়ান্টাম জগত রহস্যময়। দেখা গেলো, ইলেকট্রন ওয়েভ এবং আলোর ইন্টারফেরেন্স প্যাটার্নের মতো প্যাটার্ন তৈরি করছে! যা অবিশ্বাস্য!

এবার পদার্থ বিজ্ঞানীরা ভাবলেন হয়তো ইলেকট্রনগুলো একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করছে, যার ফলে দেয়ালে এমন প্যাটার্ন তৈরি হচ্ছে। তাই তারা ইলেকট্রন গান থেকে এক এক করে ইলেকট্রন নিক্ষেপ করলেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ফলাফলে কোন পরিবর্তন এলো না!


এবার পদার্থবিজ্ঞানীরা আরও কৌশলী হলেন। প্রকৃতপক্ষে কি ঘটছে তা দেখার জন্য তারা সেখানে আপার স্লিট বা উপরের চিরের দিকে একটি ডিটেক্টর স্থাপন করলেন, যা ইলেকট্রন পাস করার সময় একটি করে বিপ দেয় এবং তা গননা করে। এখানে ৫০ ভাগের ক্ষেত্রে এটি বিপ দিবে এবং বাকি ৫০ ভাগের ক্ষেত্রে কোন বিপ দিবে না, কারন এটি শুধুমাত্র আপার স্লিটের ইলেকট্রন গণনা করছে, লোয়ার স্লিট বা নিচের চিরের ইলেকট্রন গণনা করছে না।  এবার দেখা গেলো এটি মার্বেলের মতোই দুটি লাইন তৈরি করেছে! কিন্তু আগে আমরা পেয়েছি একটি ইন্টারফেরেন্স প্যাটার্ন আর এখন শুধুমাত্র দুটো লাইন! দুই ক্ষেত্রে দুটো ভিন্ন ফলাফল! এবার ডিটেক্টরটি বন্ধ না করে শুধুমাত্র ডাটা কালেক্ট করা বন্ধ করে দিলে আবার আমরা আগের মতো ইন্টারফেরেন্স প্যাটার্ন পাই! ব্যপারটি খুবই রহস্যজনক ! যার সমাধান আজ পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেছে।

১টি মন্তব্য

  • ইলেক্ট্রন দিয়ে দ্বি-চির পরীক্ষা টা কি বায়ু শূন্যে স্থানে করা হয়েছিল ? ইউটিউবে অনেক গুলো ভিডিও দেখলাম যেখানে পরিক্ষাটি সাধারনত বায়ু যুক্ত স্থানেই করা হচ্ছে, এক্ষেত্রে বাতাসে ইলেক্ট্রন বাধা পায়না? বাতাসের মধ্যে করার জন্যতো মানের পরিবর্তন হবার কথা ৷ তা হচ্ছেনা কেন ?

আপনার মন্তব্য লিখুন

বিভাগ সমূহ
সম্প্রতি প্রকাশিত
পাঠকের মতামত
আর্কাইভ