আজকে আমার নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের খুব কমন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু টার্ম সম্পর্কে খুব সহজ এবং সাধারণ কিছু ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করবো এবং এ নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে করে ভবিষ্যতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের জটিল বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনার পথ প্রশস্ত হয় এবং আমরা সহজে তা বুঝতে পারি। তো কথা না বাড়িয়ে চলে যাই নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের মজাদার এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ।
১।নিউক্লিয়ার ফোর্স বা শক্তি :
নিউক্লিয়ার ফোর্স বা শক্তি হলো এমন একটি শক্তি যা প্রোটন এবং নিউট্রন এর উপর ক্রিয়া করে এবং তাদের নিউক্লিয়াস এর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে । এর রেঞ্জ বা সীমা হলো 2X 10^-15 থেকে 3X 10^-15 মিটার।
এটি একটি এট্রাক্টিভ ফোর্স বা আকর্ষণ ধর্মী শক্তি । এর সীমা খুব ছোট এবং এটি এক্সচেঞ্জেবল ফোর্স বা পরিবর্তিত হয় । এটি স্পিন এর উপর নির্ভর করে এবং এটি চার্জ নিরপেক্ষ ।
২।মাস ডিফেক্ট :
একটি নিউক্লিয়াস এর মোট ভর এবং এটি যে সমস্ত উপাদন নিয়ে তৈরী তাদের আলদা আলদা ভরের সমষ্টির মধ্যে যে পার্থক্য দেখা যায় তাকে বলা হয় মাস ডিফেক্ট । একে সাধারণত δm দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে এই মাস ডিফেক্ট আসলে কেন ঘটে ?
মূলত নিউক্লিয়ার বাইন্ডিং এনার্জির জন্য পরমাণুর নিউক্লিয়াস এর প্রকৃত মোট ভর এবং ধারণাকৃত মোট ভর অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের উপাদানের আলাদা আলাদা ভরের যোগফলের মাঝে এই পার্থক্যটি দেখা যায় । মূলত নিউক্লিয়াসের প্রকৃত ভর সবসময়ই এর উপাদানের (নিউট্রন এবং প্রোটন ) ভরের যোগফল থেকে কম হয় । কারণ নিউক্লিয়াস গঠিত হতে কিছু পরিমাণ শক্তি ব্যয়িত হয় এবং এই শক্তির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর রয়েছে যে ভরটুকু নিউক্লিয়াস গঠনের সময় ব্যয়িত হয়ে যায় তাই এটি নিউক্লিয়াসের মোট ভর থেকে বাদ পরে যায় । একারণেই মূলত মাস ডিফেক্ট সংগঠিত হয় ।
৩।নিউক্লিয়ার বাইন্ডিং এনার্জি :
নিউক্লিয়ার বাইন্ডিং এনার্জি বা শক্তি হচ্ছে এমন একটি শক্তি যা নিউক্লিয়াসকে এর উপাংশ উপাদানগুলোতে ভাগ করে দেয় অর্থাৎ যে শক্তির মাধ্যমে নিউক্লিয়াস প্রোটন এবং নিউট্রনে বিভক্ত হয়ে যায় তাকে বলা হয় নিউক্লিয়ার বাইন্ডিং এনার্জি । প্রোটন এবং নিউট্রনকে সমবেতভাবে নিউক্লীয়নস বলা হয় ।
৪।নিউক্লিয়াস :
নিউক্লিয়ার ফিজিক্স পড়তে হলে নিউক্লিয়াস সম্পর্কে জানতেই হবে । আমাদের সবারই মোটমুটি ধারণা আছে নিউক্লিয়াস সম্পর্কে । এটি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে । এটি মূলত প্রোটন এবং নিউট্রন নিয়ে তৈরী।নিউক্লিয়াস মূলত ধনাত্মক চার্জ যুক্ত করণ এতে অবস্থিত প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক এবং নিউট্রন এর কোন চার্জ নেই ।নিউক্লিয়াস এর ব্যাসার্ধ হলো 10^-15 মিটার । নিউক্লিয়াস এর ভেতর কোন ইলেক্ট্রন অবস্থান করতে পারে না ।নিউক্লিয়াস এর আকৃতি হলো বর্তুলাকার । নিউক্লিয়াসের অবস্থিত প্রোটনের ভর হলো 1.672X 10^-27kg এবং চার্জ 1.6X 10^-19 C । নিউট্রন এর ভর হল 1.675X 10^-27kg । এদের উভয়ের স্পিনই 1/2 ।
এখন, আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে নিউক্লিয়াসের ভেতর কেন ইলেক্ট্রন অবস্থান করতে পারে না ?
এর কারণ হলো আমরা জানি নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ 10^-15। নিউক্লিয়াসের ভেতরে অবস্থান করার জন্য এর আনসার্টেইনিটি অবস্থান হতে হবে 10^-15 ।
এখন, হাইজেনবার্গ এর আনসার্টেইনিটি প্রিন্সিপল থেকে আমরা জানি ,
δx δPx =h cut /2
= h/4Π
δ Px = h / 4Π X δx
= 6.62X 10^-34/ 4ΠX 10^-15
=5.27X 10^-20 kg.m/s
যে ইলেকট্রনের এত বেশি ভরবেগ আছে তার তার বেগ অবশ্যই আলোর বেগ থেকে বেশি হবে । কিন্তু তা অসম্ভব । তাই ইলেক্ট্রন নিউক্লিয়াসে অবস্থান করতে পারে না ।
৫।তেজস্ক্রিয়তা এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থ:
রেডিওএক্টিভ ইলিমেন্ট বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে অবিরত তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়াকে তেজস্ক্রিয়তা বলে ।
তেজস্ক্রিয়তার একক হলো কুরি । প্রতি সেকেন্ডে 3X 10^-10 সংখ্যক এটম বা পরমাণু ডিসইন্টিগ্রেশন হওয়ার প্রক্রিয়াকে 1 কুরি বলে । যেসব পদার্থের পরমানবিক ভর 206 বা তার বেশি তারা সাধারণত রেডিওএক্টিভিটি দেখায় । এটি একটি অবিরাম এবং স্বতস্ফুর্ত প্রক্রিয়া। এটি বাইরের প্রভাবক যেমন উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ চাপ ইত্যাদি দ্বার প্রভাবিত হয় না । এটি জৈবকোষের ক্ষতি করে থাকে ।
সাধারণত দুই ধরনের রেডিওএক্টিভিটি দেখা যায় । যথা :
1. প্রকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা
এবং 2. কৃত্তিম তেজস্ক্রিয়তা ।
1. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা :
যে প্রক্রিয়ায় পদার্থ নিজ থেকেই তেজস্ক্রিয়তা নিঃসরণ করে তাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলে ।
এটি একটি স্বতস্ফুর্ত প্রক্রিয়া । যেসব পদার্থের পরমানবিক সংখ্যা 83 থেকে বেশী তারা সাধারণত প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা দেখায় । পিরিওডিক টেবিলে সাধারণত তিনধরনের তেজস্ক্রিয় সিরিজ দেখা যায় । যথা : ইউরেনিয়াম সিরিজ , এক্টিনিয়াম সিরিজ এবং থোরিয়াম সিরিজ ।
2.কৃত্তিম তেজস্ক্রিয়তা :
যে প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীল এবং তেজস্ক্রিয় নয় এমন নিউক্লিয়াস উচ্চ গতিসম্পন্ন পদার্থ (নিউট্রন ) দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ তৈরী করে তাকে কৃত্তিম তেজস্ক্রিয়তা বলে ।
৬।আলফা ডিকে:
আলফা ডিকে কি তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে আলফা পার্টিকেল কি ?
দুটো প্রোটন এবং দুটো নিউট্রন নিয়ে গঠিত হিলিয়াম নিউক্লিয়াসকেই আলফা পার্টিকেল বলে ।
তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে যখন হিলিয়াম নিউক্লিয়াস নির্গত হয় তখন তাকে আলফা ডিকে বলে । যেসব নিউক্লিয়াসের পরমানবিক ভর 140 থেকে বেশী, সে সমস্ত নিউক্লিয়াসে সাধারণত আলফা ডিকে ঘটে থাকে । এর কাইনেটিক এনার্জি হলো 4-9MeV.
নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের আরো এমন অসংখ্য ছোট ছোট মজাদার এবং গুরুত্বপূর্ণকিছু বিষয় রয়েছে। তবে আজ এপর্যন্তই থাক। পরবর্তীতে এনিয়ে আরো কথা হবে। জানা হবে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ।
thanks for your feedback Kamol Gain 🙂
This is Useful Status,,,,,Thanks To RajMoni Pal & Curious7.