মহাবিশ্ব, আমাদের আবির্ভাব, জগতের প্রাণিকূল, জড়-জীব আরো অসংখ্য বিষয় আমাদের মনকে কৌতুহলী করে তোলে। এই কৌতুহলী মনে জাগে নানা রকম প্রশ্ন। একটির উত্তর জানার সাথে সাথেই আরো অনেক গুলো প্রশ্ন মনকে ব্যাকুল করে তোলে। এই প্রশ্নগুলোই আমাদেরকে পথ দেখায়, নতুনের সন্ধান দেয়, অভিনব সৃষ্টির উল্লাসে মেতে উঠতে অনুপ্রাণিত করে। চারপাশের জগৎকে, নিজেকে জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানের সাথে আমাদের গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
আমরা অনেকেই বিজ্ঞান পড়ি কিন্তু বিজ্ঞানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে পারিনা।
সত্যিই আপনার যদি একজন প্রকৃত বন্ধু থাকে তাহলে বিপদের মূহর্তে আপনাকে সে সহযোগিতা করবে।বর্তমান সময়ে এমন একজন বন্ধু আপনি সত্যিই পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না, তবে আশার কথা হচ্ছে বিজ্ঞানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হলে বিজ্ঞানই আপনাকে একজন প্রকৃত বন্ধুর মতো সহযোগিতা করবে। আমি এমন একজন বন্ধুকে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব, আপনিও নিশ্চয়? তারজন্য আমাদেরকে হতে হবে আরো বেশি কৌতুহলী।
মৌলিক কণিকামূলত 1930 সালের দিকে ইলেক্ট্রন এবং প্রোটনকেই মৌলিক কণিকা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। নিউট্রন এবং পজিট্রন আবিষ্কৃত হয় 1932 সালের দিকে । পরবর্তীতে কসমিক রশ্মি নিয়ে গবেষণা করার সময় মেসন কণা আবিষ্কৃত হয়। এই সবধরনের কণিকাকেই বর্তমানে মৌলিক কণিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়, যে কণিকাসমূহকে নতুন কোন কণিকায় বিভক্ত করা যায় না বা যে কণিকাগুলো অন্য কোন কণিকার সমন্বয়ে গঠিত নয় তারাই হচ্ছে মৌলিক কণিকা । যদিও এখনও মৌলিক কণিকা সম্পর্কে অনেক আজান তথ্য রয়ে গেছে, এরা কি সত্যিই মৌলিক কণিকা নাকি এরাও অন্য কোন মৌলিক কণিকার সমন্বয়ে গঠিত এ নিয়ে রহস্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। পার্টিকেল ফিজিক্স অনুসারে মৌলিক কণিকার ভিত্তি এখনও অজানা ।
আজকে আমরা ভর, মিথস্ক্রিয়া এবং স্ট্যাটিসটিক্স এর উপর ভিত্তি করে তাদের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে জানবো।
লেপটন :সবথেকে হালকা কণাসমূহকে বলা হয় লেপটন । যেমন : ইলেক্ট্রন , নিউট্রিনো ইত্যাদি ।
মেসন :ইলেক্ট্রন এবং প্রোটনের ভরের মধ্যবর্তী ভর বিশিষ্ট কণাসমূহকে বলা হয় মেসন ।
যেমন : পায়নস , কায়নস ইত্যাদি ।
বেরিয়ন :সবথেকে ভারী কণাসমূহকে বলা হয় বেরিয়ন ।
যেমন : প্রোটন, নিউক্লিয়ন ইত্যাদি ।
হ্যাড্রন :যে সকল মৌলিক কণিকা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাদেরকে বলা হয় হ্যাড্রন । যেমন : বেরিয়াম , মেসন অর্থাৎ প্রোটন, নিউট্রন , পায়ন ইত্যাদি।
লেপটন:যে সকল মৌলিক কণিকা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না তাদের বলা হয় লেপটন।
যেমনঃ ইলেক্ট্রন, মিউয়ন, নিউট্রিনো ইত্যাদি।
বোসন :যে সকল মৌলিক কণিকা সমূহকে সিমেট্রিক বা প্রতিসম ওয়েভ ফাংশনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় তাদেরকে বলা হয় বোসন কণা। এরা বোস – আইনস্টাইনের স্ট্যাটিসটিকস মেনে চলে । এদের শূন্য বা পূর্ণ সংখ্যক স্পিন থাকে । এরা পাওলি এক্সক্লুসন প্রিন্সিপল মেনে চলে না ।
যেমন : ফোটন , পাই মেসন ইত্যাদি ।
ফার্মিয়ন :যে সকল মৌলিক কণিকা সমূহকে এন্টিসিমেট্রিক বা অপ্রতিসম ওয়েভ ফাংশনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাদেরকে বলা হয় ফার্মিয়ন। এরা ফার্মি-ডিরেক ডিস্ট্রিবিউশন মেনে চলে এবং এদের হাফ ইন্টিজার স্পিন থাকে । ফার্মিয়ন পাওলি এক্সক্লুসন প্রিন্সিপল মেনে চলে ।
যেমন : ইলেক্ট্রন , নিউক্লীয়ন ইত্যাদি ।
মৌলিক কণিকা সমূহকে আরও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় । পরবর্তীতে এ নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে । মৌলিক কণিকা সমূহ যেমন রহস্যময় তেমনি এদের নিয়ে জটিলতারও অন্ত নেই । বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে অনেক অজানাকেই আজ আমরা জানতে পারছি । হয়তো ভবিষ্যতে আরও অজানা, জটিল এবং রহস্যময় অনেককিছু সম্পর্কেই আমরা জানতে পারবো এবং কালের স্রোতে স্বল্পকালের জন্য হলেও সাক্ষী হতে পারবো বিজ্ঞানের জয়যাত্রার ।
|
মন্তব্য নেই
আপনার মন্তব্য লিখুন