মিল্কিওয়ে ছায়াপথে লুকানো দলচ্যুত কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান

মিল্কিওয়ে ছায়াপথের এক কোনে একটি দ্রুত চলমান মহাজাগতিক মেঘের গ্যাসের গতি বিশ্লেষণ করে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মেঘের মাঝে লুকায়িত পরিভ্রমণরত কৃষ্ণ গহ্ববরের অস্তিত্ব আছে বলে অনুমান করেন। এরপর থেকে মহাকাশে কৃষ্ণ গহ্ববরের অনুসন্ধান শুরু হয়। ধারণা করা হয় লক্ষ লক্ষ এমন বস্তু মিল্কিওয়ে ছায়াপথে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে যার মধ্যে কেবল ডজনখানেক বস্তু আমরা খুঁজে পেয়েছি।

কৃষ্ণগহ্ববর খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন একটি ব্যাপার, কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে কালো হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃষ্ণগহ্ববর কিছু প্রভাব সৃষ্টি করে যা দেখা যায় এবং সেটা দেখে কৃষ্ণগহ্ববরের অস্তিত্ব অনুমান করা যায়। উদাহরণস্বরূপ কৃষ্ণগহ্ববরের যদি একটি সহচর তারা থাকে, তবে কৃষ্ণগহ্ববরের ভেতর দিয়ে গ্যাসের প্রবাহের ফলে এর চারপাশে স্তুপাকারে জমা হয় যা পরিশেষে ডিস্কের আকার ধারণ করে। ডিস্কটি কৃষ্ণগহ্ববর দ্বারা সৃষ্ট প্রকান্ড মধ্যাকর্ষণের ফলে উত্তপ্ত হয় এবং তীব্র বিকিরণ নিঃসরণ করে। কিন্তু যদি কৃষ্ণগহ্ববরটি মহাশূন্যে একা ভাসতে থাকে তবে এর মধ্য থেকে কোনো ধরণের নিঃসরণই দেখা যাবে না।
fig1
জাপানের কেইও ইউনিভার্সিটির স্নাতক ছাত্র মাসায়া ইয়ামাদা এবং কেইও ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তমহারু ওকার নেতৃত্বে একটি গবেষক দল সুপারনোভা রেমিনেন্ট w৪৪ এর কাছাকাছি আণবিক মেঘের পাল দেখার জন্য চিলিতে এ.এস.টি.ই. টেলিস্কোপ  ( Atacama Submillimeter Telescope Experiment ) ব্যবহার করেন এবং নোবেয়াম রেডিও অবজারভেটরিতে ৪৫-এম. রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করেন। এই আণবিক মেঘের পাল আমাদের কাছ থেকে প্রায় 10,000 আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে এর পার্শবর্তী আণবিক গ্যাসগুলোতে কি পরিমান শক্তি স্থানান্তরিত হয় তা পরীক্ষা করাই ছিলো তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য। কিন্তু তারা W44 এর প্রান্তে একটি লুকায়িত কৃষ্ণগহ্ববর থাকার লক্ষণ খুঁজে পান।

দলটি জরিপ করে একটি অনিয়মিত গতিসম্পন্ন নিশ্ছিদ্র আণবিক মেঘ দেখতে পায়। “বুলেট” নামক এই মেঘের গতি ১০০ কিলোমিটার/ সেকেন্ড এর বেশি যা যা ইন্টারস্টেলার স্পেসে শব্দের গতিকে অতিক্রম করে দুটি ক্রমের বেশি মাত্রায়। দুই আলোকবর্ষ সমান এই মেঘটি মিল্কিওয়ে এর ঘূর্ণনের ফলে বিপরীত দিকে পেছনে ফিরে আসে।
activesuperm
“বুলেটের” উৎপত্তি কিভাবে হলো তা জানতে দলটি গ্যাসের মেঘটিকে এ.এস.টি.ই. টেলিস্কোপ এবং নোবেয়াম ৪৫-এম. রেডিও টেলিস্কোপ দ্বারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এর ফলে যে তথ্য পাওয়া যায় তা থেকে জানা যায় “বুলেট”   “W44 সুপারনোভার” প্রান্ত থেকে অপরিমেয় গতিশক্তির সাথে উৎপন্ন হয়েছে।ইয়ামাদা বলেন, “বুলেটের ভেতর অধিকাংশেরই ৫০ কিলোমিটার/ সেকেন্ড এর বিশাল গতিশক্তি থাকে। কিন্তু বুলেটের উপরের অংশের উপাদানসমূহের গতি প্রায় ১২০ কিলোমিটার/ সেকেন্ড।” তিনি আরো বলেন, “এর গতিশক্তি W44 সুপারনোভার থেকে অনেক বেশি । এমন শক্তিশালী মেঘ সাধারণ পরিবেশে উৎপন্ন করা প্রায় অসম্ভব।”

দলটি বুলেটের গঠনের দুটি উপায় প্রস্তাব করে, দুই ক্ষেত্রেই অন্ধকারাচ্ছন্ন, নিশ্ছিদ্র মধ্যাকর্ষণ শক্তিসম্পন্ন কৃষ্ণগহ্ববরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়।একটি  প্রস্তাব অনুসারে বলা হয়, সুপারনোভার গ্যাস সেল গুলো কৃষ্ণগহ্ববরের ভেতর দিয়ে যায়। কৃষ্ণগহ্ববর সেই গ্যাসকে মহাকর্ষীয় বলে টানতে থাকে যার ফলে বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে কৃষ্ণগহ্ববর পার করার পর গ্যাসগুলো আমাদের দিকেও আসে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, কৃষ্ণগহ্ববরের ভর সৌর ভরের ৩.৫ গুন্ বা তারও বেশি। অন্য প্রস্তাব অনুসারে বলা হয়,”ইরুপশন মডেল” যেখানে উচ্চগতি সম্পন্ন কৃষ্ণগহ্ববর প্রবল বেগে উচ্চঘনত্ব বিশিষ্ট গ্যাসের মধ্য দিয়ে ধাবিত হয় যার ফলে সেই গ্যাস কৃষ্ণগহ্ববরের শক্তিশালী মধ্যাকর্ষণ বল দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং গ্যাস প্রবাহের সৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে গবেষকরা ধারণা করেন কৃষ্ণগহ্ববরের ভর সৌর ভরের প্রায় ৩৬ গুন্ বা তারও বেশি। বর্তমানে যতটুকু তথ্য জানা রয়েছে তার সাথে তুলনা করলে কোন তত্ত্বটি অপেক্ষাকৃত বেশি মিল বিশিষ্ট তা বের করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।source-universe-nasa

তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে অনুমান করা হয় যে, মিল্কিওয়েতে ১০০ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন সংখ্যক কৃষ্ণগহ্ববর থাকতে পারে, যদিও এর মাঝে কেবল ৬০ এর মতো সংখ্যক কৃষ্ণগহ্ববরের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। ওকা বলেন, ” আমরা দলচ্যুত কৃষ্ণগহ্ববরগুলোকে খুঁজে পাবার একটি নতুন পথ খুঁজে পেয়েছি।” দলটি তাদের লব্ধ ধারণাগুলো ছড়ানোর আশা ব্যক্ত করে এবং তারা  রেডিও ইন্টারফেরোমিটার (যেমন আটাকামা লার্জ মিলিমিটার / সাবমিলিমিটার এরে (ALMA) ) ব্যবহার করে “বুলেটের” মাঝে কৃষ্ণগহ্ববরের উপস্থিতির স্পষ্টতর প্রমান বের করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

মন্তব্য নেই

আপনার মন্তব্য লিখুন

বিভাগ সমূহ
সম্প্রতি প্রকাশিত
পাঠকের মতামত
আর্কাইভ