“কর্নার ক্যামেরা” যা খুঁজে বের করবে আড়ালে থাকা বস্তু

গোয়েন্দা কাহিনী বা সুপারহিরো সিনেমাগুলোতে আমরা অনেক সময়ই দেখে থাকি, যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে দেয়ালের বাইরে থেকে দেয়ালের ভেতরে কি কি ঘটছে তা দেখা হচ্ছে, যেটি সিনেমাতে  খুবই কৌশলী এবং আকর্ষণীয় একটি অংশ।

সিনেমাতে ব্যবহৃত সেই কাল্পনিক প্রযুক্তিটিকে এবার বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণা থেকে জানা যায়, এই প্রযুক্তিটি জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য হতে পারে, এমনকি সেটা একটি স্মার্টফোনের ক্যামেরার মাধ্যমেই! যা আনাচে কানাচে লুকিয়ে রাখা বস্তুকে সনাক্ত করতে পারবে। গবেষকরা বলেন, ভবিষ্যতে এই শব্দ প্রযুক্তি ব্যাবহার করে যানবাহনগুলো আধার জায়গা বা আনাচে কানাচে চলাচল করতে সক্ষম হবে।

প্রধান গবেষক ক্যাটি বোম্যান বলেন, আমরা হয়তো খুব শীঘ্রই এই ধারনাটি ব্যাবহার করে পথচারী, দ্রুত গতির গাড়ি এবং ড্রাইভারকে কোন বিল্ডিং বা কোন স্তম্ভের আড়ালে কি রয়েছে তা সম্পর্কে সচেতন করতে পারবো, যার ফলে কিছু সেকেন্ড আগের সতর্কতা অনেক জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রযুক্তিটি কিছু খুঁজে বের করা, উদ্ধার করা এবং কোন দেয়ালের অপর প্রান্তে কি রয়েছে এবং কি ঘটতে যাচ্ছে এসব সম্পর্কে ধারনা দিতেও সক্ষম হবে।

আড়াল থেকে বা দেয়ালের অপর প্রান্ত থেকে দেখার এই “সুপার পাওয়ার” প্রযুক্তিটিকে বাস্তবায়িত করতে গবেষকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। যেমন ২০১৫ সালে গবেষকরা দেখান যে, কোন কোনায় বা তার আশেপাশে দেখার জন্য লেজার ব্যাবহার করা যেতে পারে, যেখানে বস্তুর পৃষ্ঠতলের চারপাশে আলোর স্পন্দন নিক্ষেপ করা হবে। এই পৃষ্ঠতলটি আয়না হিসেবে কাজ করে এবং লেজার রশ্মির এই স্পন্দনকে লুকায়িত বস্তুর উপর বিক্ষেপিত করে। বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোটি পর্যবেক্ষণ এবং স্ক্যান করে বিজ্ঞানীরা লুকায়িত বস্তুর আকার কি তা পুনর্গঠন করতে সক্ষম হন।

কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন খুব দ্রুতগতির লেজার রশ্মি এবং এক্সট্রা অর্ডিনারি সেন্সেটিভ ক্যামেরা। কিন্তু বোম্যান এবং তার সহযোগীরা একটি অন্য ধরণের প্রযুক্তি ব্যাবহার করেছেন যার ফলে শুধুমাত্র স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়েও এই কাজ করা সম্ভব। বোম্যান বলেন, আমরা দৃশ্যে আলো ব্যাবহার করি এবং লুকায়িত দৃশ্যে আমাদের নিজস্ব আলো ব্যাবহার করতে হয় না, এর জন্যই কোনায় লুকায়িত কিছু দেখার জন্য আমরা সাধারন ভোক্তাদের ক্যামেরা ব্যাবহার করতে পারি তার জন্য কোন বিশেষ সরঞ্জাম ব্যাবহার না করেই। এই বিশেষ প্রযুক্তিটিকে বলা হয় কর্নার ক্যামেরা। যা লুকায়িত বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোকে বিশ্লেষণ করে এবং ক্যামেরার সোজাসুজি ভুমিতে আপতিত হয়। এই আলোকে বলা হয় “পেনুমব্রা“।

গবেষণা থেকে জানা যায়, এই পদ্ধতিটি কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই পেনুমব্রাকে বিশ্লেষণ করে ডজনখানেক সতন্ত্র ছবিকে একত্রিত করে। যা ব্যাবহার করে এই পদ্ধতিটি অপর কোনায় অবস্থিত বস্তুর গতি এবং আবক্রপথ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে এই কর্নার ক্যামেরাতে একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা হল এতে এমন একটি নিশ্চল ক্যামেরা হতে হবে যা সবসময়য় স্থির থাকবে। অনেক পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ বা ঝাঁকি উপেক্ষা করা প্রয়োজন, যেমন গাড়িতে। কিন্তু সে ধরণের ষ্টেশনারী ক্যামেরা খুবই ব্যায় সাপেক্ষ। বোম্যান বলেন, গবেষকরা বর্তমানে চলমান গাড়ি এবং হুইল চেয়ারে কি করে এই পদ্ধতি দ্রুত কার্যকর করা যায় তা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই কর্নার ক্যামেরার কার্যক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

সূত্রঃ livescience.com

মন্তব্য নেই

আপনার মন্তব্য লিখুন

বিভাগ সমূহ
সম্প্রতি প্রকাশিত
পাঠকের মতামত
আর্কাইভ